কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সঙ্ঘাত-সহিংসতায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ২৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কে এন রায় নিয়তি। কোটা বিরোধী আন্দোলনের অন্তরালে বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছে বলে রাজধানীর ডেমরা থানায় ২টি পৃথক নাশকতার মামলা হয়েছে। গত জুলাই দিবাগত রাতে দুই পৃথক অভিযোগকারী ২৮ জন এজাহারনামীয়সহ বিপুলসংখ্যক বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের উশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই রাত থেকে পুলিশের চিরুনি অভিযানে ৩ দিনে ২১ জন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে অপরাধে জড়িত ও সহযোগিতার দায়ে একটি মহিলা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মো. মিজানুর রহমান (৫০) ও বিএনপি নেতা মো. মনিরুজ্জামানকে (৫৯) রিমান্ডেও আনা হয়েছে। বাকিদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রিমান্ড শেষে মো. মনিরুজ্জামানকে আদালতে আবারও রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। একই সঙ্গে বুধবার রাতে গ্রেফতার মো. শহিদুল হক (৫৩), সিফাত মোল্লা (১৯), মো. হৃদয় (২২), মো. ফয়জুর রহমান (৫৫), ও দেলোয়ার হোসেনকে (৫০) আদালতে পাঠানো হয়। গত বুধবার দুপুরে আবার মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার মো. দুলাল মেম্বার (৪৭), মোজাম্মেল হোসেন মোল্লা (৫৩), জাহাঙ্গীর আলম (৫০), মো. জলিল (৫৮), নাইমুল হাসান বাবু (৩০) ও মো. মাহবুব আলমকে (৩৪) আদালতে পাঠানো হয়। এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে মো. শরিফ হোসেন মোল্লা, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. আজহারুল ইসলাম, মো. ইলিয়াস, মো. শাহ পরান, মো. শাহাদৎ হোসেন, সাদিকুল ইসলাম, মো. কামরুজ্জামান দারা, মাওলানা আ. কাদের মিয়া, মো. ফজলুর রহমান মাসুম, নাঈম উদ্দিন সাকিব, মো. ইফতেখারুল ইসলাম সৌরভ, মো. রাজিব চৌকিদার, মো. সোহাগ চৌকিদার ও মো. লিটন চৌকিদারকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার পরিদর্শক অপারেশন সুব্রত কুমার পোদ্দার বলেন, গত ১৮ জুলাই সাধারণ ছাত্র—ছাত্রীরা বাংলাদেশ কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচী ঘোষণা করে। এ সুযোগে ওই কর্মসূচীর অন্তরালে অভিযুক্ত ডেমরার বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও আশপাশে সরকারি দফতরে, বিভিন্ন ভবনে ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। এদিকে ২০ ও ২১ জুলাই দুপুরে কয়েক দফায় ডেমরার মাতুয়াইল সাইনবোর্ড এলাকার গোল্ডেন ফাইবার কোং নামে একটি স্পিডবোট আমদানি ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে তাণ্ডব চালায়। সুব্রত কুমার পোদ্দার আরও বলেন, দুস্কৃতিকারীরা কয়েক দফায় ওই প্রতিষ্ঠানর বাইরে থাকা ১১ টি স্পিডবোট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিয়ে আগুন জালিয়ে পোড়ায়। পরবর্তীতে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তাদের গোডাউনে পর্যায়ক্রমে আগুন ধরিয়ে দিলে সব মালামাল পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের স্পিডবোট মেশিন ও বোটসহ অন্যান্য প্রায় ৪ কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। আর এসব বিষয়ে থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিএনপি নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীরা জানায়, ছাত্র আন্দোলনে তাণ্ডব চালানোর ঘটনার পর বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে তাদের পরিবারের লোকজন রয়েছেন মারাত্মক দুশ্চিন্তায়। তাদের অভিমত ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হলে কোন আপত্তি নেই। তবে যারা এসব তান্ডবের সাথে জড়িত নয় বা বর্তমানে রাজনীতি বাদ দেয়ায় সরকার বিরোধী কোন আন্দোলন সংগ্রামেও যারা অংশ নেয় না সেসব মানুষকে যাতে গ্রেফতার না করা হয়। আর এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন পালিয়ে বেড়ানো অনেক পূর্বে যোগ দেওয়া বিএনপি নেতাকর্মীর পরিবারের লোকজন।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের অন্তরালে বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের তান্ডবকে ঘিরে ব্যাংক ও ডিজিটাল লেনদেন বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে স্বল্প মেয়াদে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমান অনেক হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অনেকের দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। অনেকে টাকা তুলতে না পাড়ায় ও যানচলাচল বন্ধ থাকায় মালামাল আনতে পারেনি। এক্ষেত্রে ভোক্তাদেরও অনেক বেশি দামে পণ্য ক্রয় করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। বিদ্যুৎ ও পানির কষ্টে পড়েছেন লাখো অধিবাসীরা। এদিকে কারফিউ চলমান থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন অধিবাসী ও ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক সময় কম থাকায় লেনদেনেও ব্যাঘাত ঘটছে গ্রাহকদের। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় চার দেয়ালে বন্দি মানুষগুলো হাঁপিয়ে উঠেছেন বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি ডেমরার সাইনবোর্ড এলাকায় ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উছৃঙ্খল বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সারাদেশের ন্যায় ডেমরা ও আশপাশেও অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন করেছে যা পূরণ হবার নয়। আর কোটাবিরোধী আন্দেলনের অন্তরালে যারাই জড়িত রয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

রাজধানীতে আরও ২৬৮ জন গ্রেফতার
- আপলোড সময় : ২৬-০৭-২০২৪ ০৩:০১:০৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০৭-২০২৪ ০৩:০১:০৫ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ